সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা:
স্কুলে অনুপস্থিত থেকে প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহনকারী নেত্রকোনা জেলাধীন বারহাট্টা উপজেলার আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অভিযোগ শুনে অবাক হয়ে যান তদন্ত করতে আসা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুর রহমান। নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে গতকাল সোমবার তদন্তে আসেন তিনি। দিনভর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনেন। তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজ এদিন অনুপস্থিত ছিলেন। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজের বিরুদ্ধে সম্প্রতি উপজেলার ৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে আসেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের তদন্তে আসার খবরে দুপুরে বারহাট্টা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সামনে অভিযোগকারী শিক্ষকরা জড়ো হয়ে সাজ্জাদুল হক সবুজের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, সাজ্জাদুল হক সবুজ নিজে তো স্কুলে যান না। উল্টো নানা অভিযোগ দিয়ে অন্যন্য শিক্ষকদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছেন। কখনো তিনি নিজে, কখনো অন্য কাউকে দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষকদের নামে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেন। এসবের জবাব দিতেই বেশিরভাগ সময়ই তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে স্কুলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। তাকে কিছু বলতে গেলে উল্টো সবাইকে হুমকি দেন সবুজ। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তো তিনি পরোয়াই করেন না। কথায় কথায় মামলার হুমকি দেন। কিছুদিন আগে ৭০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে রিট করেছেন তিনি। বিকল্প কোন উপায় না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সবুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সকল শিক্ষক। শিক্ষকরা আরও জানান, শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ধর্ষণ মামলায় তিনি জেলহাজতে গেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে একবার বরখাস্তও হয়েছেন। এমনকি নিজের বাবার পরিচয় গোপন করে পোষ্য কোটায় চাকরিও নিয়েছেন সবুজ। এতকিছুর পরও কিভাবে তিনি নিজের পদে বহাল আছেন? তদন্তে আসা কর্মকর্তাদের এমন আরও অনেক নালিশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। এমনকি সবুজের অত্যাচার থেকে মুক্তি চান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার অনেক প্রধান শিক্ষক বলেন, সবুজের অত্যাচারে উপজেলার সব শিক্ষকরা অতিষ্ঠ।শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর মামলা করাই তার কাজ। সপ্তাহে একদিনও তিনি স্কুলে তো যান-ই না বরং সব শিক্ষককে তিনি মামলার ভয়ের মধ্যে রাখেন। এমনকি ফোনেও শিক্ষকদের নানা ধরনের হুমকি দেন। এলাকায় তিনি মামলাবাজ মাষ্টার হিসেবে পরিচিত। তদন্তে আসা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্ত করতে এসে সাজ্জাদুল হক সবুজের বিস্তর অভিযোগ সম্পর্কে জেনে অবাক হলাম। অবৈধভাবে পোষ্য কোটায় চাকরি, অন্য শিক্ষকদের হয়রানি, মামলার হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ শুনলাম। তদন্তে আসার আগে তাকে উপস্থিত থাকতে নোটিশ দেওয়া হলেও অভিযুক্ত শিক্ষক সবুজ আসেননি। তদন্ত করেছি এবার যাচাই-বাছাই করে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এস এম সাজ্জাদুল হক সবুজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য: আশিয়ল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল হক সবুজ গত ৬ ডিসেম্বর সকালে স্কুল ফেলে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. ইলিয়াসের নির্বাচনী সভায় ভোট চান। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেন।